কোন কোন সময় সালাম দেওয়া যাবে না? খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যাবে কি না?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

একজন মুসলমানের সাথে অন্যজন মুসলিমের দেখা হলে সালাম বিনিময় করা সুন্নত। কেউ আপনাকে সালাম দিকে সেই সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব সালাম বিনিময় ইসলামের অন্যান্য সৌন্দর্য গুলোর মত, একটি সৌন্দর্য। যেকোনো কথোপকথন সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু করা এবং সালাম বিনিময়ের মাধ্যমেই শেষ করার প্রতি ইসলামে জোর দেওয়া হয়েছে।


সালামের গুরুত্ব

সালামের দেওয়া ও নেওয়ার প্রতি ইসলামে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সালামের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে রাসূল সাঃ এর কয়েকটি হাদীস পর্যালোচনা করলেই যথেষ্ট হয়ে যায়।

সালাম দেওয়া নিষেধ সময়, কোন কোন সময় সালাম দেওয়া যাবে না


সালাম সম্পর্কে হাদিস

আসুন সালাম নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন হাদীস জেনে নেই যেগুলো রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত। এসব হাদিস সম্পর্কে জানলে সালামের প্রতি আমরা আরো মনোযোগী হব এবং সালাম বিনিময়ে উৎসাহী হব।

১. রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যাক্তি আগে আগে সালাম দেয় সে অহংকার থেকে মুক্ত। ( বাইহাকি)

২. ঐ মুসলিমের ইসলাম হল উত্তম ও উৎকৃষ্ট ইসলাম যে পরিচয়-অপরিচিত সকলকেই সালাম দিয়ে থাকে। ( বুখারী শরীফ -১২ )

৩. যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পূর্ন ইমান আনবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পূর্ন ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করতে পার। নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচলনের মাধ্যমে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।

৪. সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও, সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।


সালাম হল শান্তির বাণী। আল কুরআন এ বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ পাক নিজে সালামের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রাসূল সাঃ আমাদের সালামের গুরুত্ব বুঝিয়েছে এবং সঠিক উপায়ে সালাম দেওয়া শিখিয়েছেন।

সালাম দেওয়ার বিধান

সালাম হলো শান্তির দোয়া। একে অন্যের প্রতি সালাম বিনিময় করার মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তির দোয়া করা হয়। ইসলামে ভাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সালাম বিনিময়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সালাম দেওয়ার বিধান সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনি ছোট-বড় পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলিম ভাই বোনকে সালাম দিতে পারবেন।


কখন সালাম দেওয়া নিষেধ?

সর্বদা সালাম বিনিময়ের জন্যে আদেশ দেওয়া হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সালাম দেওয়াকে মাকরুহ করা হয়েছে। অর্থাৎ এমন কিছু সময় রয়েছে যেসকল সময় সালাম দেওয়া যাবে না।

এখন প্রশ্ন হল কোন কোন সময় সালাম দেওয়া যাবে না? কখন সালাম দেওয়ার নিষেধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে উল্লেখ করা হল।

কোন কোন সময় সালাম দেওয়া যাবে না?

সালাম দেওয়ার বিধান সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সালাম দেওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে। নিচে এমনই কিছু সময় তুলে ধরা হল যখন সালাম দেখা যাবে না।

মূল আলোচনা শুরু করার আগে একটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে দেওয়া ভালো, এই আলোচনায় যে সালাম দেওয়া অনুপযুক্ত সময় বা পরিস্থিতি গুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো ইন্টারনেটে ও বিভিন্ন বই এ গভীর অনুসন্ধানের পরে তুলে ধরা হয়েছে।


যেসব সময় সালাম দেওয়া যাবে না

যদি আপনি কোনো বিষয়ের সাথে অমত থাকেন তাহলে আপনি সেটা আমাদের কমেন্ট করে অথবা কন্টাক্ট ইমেইলে জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা আপনাদের মতামতকে যথাসাধ্য গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করব।

১. নামাজরত অবস্থায়

কোনো ব্যক্তি নামাজ রত অবস্থায় থাকলে তাকে সালাম দেওয়া যাবে না। এই সময় সালাম দেওয়ার পরিবর্তে না দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

২. স্বামী স্ত্রীর অন্তরঙ্গ অবস্থায়

যখন স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের মহব্বতে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় সেই সময় তাদের সালাম দেওয়া নিষেধ করা হয়েছে।  এই ক্ষেত্রে সালাম দেওয়া যাবে না।

৩. শোধনের সময়

যদি কোনো ব্যাক্তি মলত্যাগরত অবস্থায় থাকেন সেই সময় তাকে সালাম দেওয়া বা সালমা নেওয়া যাবে না। এমনকি সেই ব্যাক্তিও কাউকে সালাম দিতে পারবেন না

আরো একটি কথা জেনে রাখুন, মলত্যাগ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া যাবে না এমনকি পায়খানায় থাকা অবস্থায় আল্লাহর নাম নেওয়া  থেকে বিরত থাকুন।

০৪. আযান দেওয়া অবস্থায়

যিনি আযান দিচ্ছেন তাকে সালাম দেবেন না। আযান দেওয়া অবস্থায় সালাম দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।তাই আজান দেওয়ার সময় সালাম দেবেন না।

০৫. তেলোয়াতের সময়

কোনো ব্যক্তি কুরআন তেলোয়াত করলে তাকে সালাম দেওয়া প্রতি অনুৎসাহিত করা হয়েছে। এই সময় সালাম দেওয়ার থেকে না দেওয়াই ভালো।

০৬. ওযু করার সময়

অনেক ওলামা-এ কেরাম এই বিষয়ে একমত যে ওযু করার সময় সালাম দেওয়ার থেকে না দেওয়া উত্তম। আবার অনেকেই এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

তবে ওযু যেহেতু একটি এবাদত, এসময় মনযোগী থাকতে হয়, তাই এই সময়ে সালাম না দেওয়াই উত্তম।

এই কয়টি ক্ষেত্রে সালাম দেওয়া যাবে না। এই সময়গুলোতে সালাম বিনিময়ে নিষেধ করা হয়েছে। তাই উপরে বর্ণিত সময় সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

অনেকে প্রশ্ন করে খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যাবে কি না? পিছন থেকে সালাম দেওয়া যাবে কি না? এসব প্রশ্নের উত্তর আপনাদের জন্য নিচে উল্লেখ করা হল।

খাওয়ার সময় সালমা দেওয়া যাবে কি না?

আমাদের মধ্যে অনেকেই খাওয়ার সময় সালাম দেওয়াকে গুনাহের কাজ মনে করেন। আসলে ব্যাপারটি এমন না। খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া ও নেওয়া যাবে কোনো সমস্যা হবে না।

খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যাবে এই বিষয়ে প্রসিদ্ধ মতে সংখ্যাই বেশি। তাই খাওয়ার সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। আপনি খাওয়ার সময় সালাম দিতেও পারবেন সাথে সাথে সালাম নিতেও পারবেন।

পিছন থেকে সালাম দেওয়া যাবে কি?

পিছন থেকে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা আছে কি না? এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। উত্তর হল, না। পিছন দিক থেকে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। আপনি চাইলে পিছন দিক থেকে সালাম দিতে পারবেন।

Next Post Previous Post