কবর জিয়ারতের দোয়া | করব জিয়ারতের নিয়ম ( Kobar ziarat dua )
কবর আমাদের সকলের অন্তিম ঠিকানা। আমাদের সবাইকে একদিন কবরবাসীর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তাই কবরে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম মাধ্যম হল কবর জিয়ারত করা। কবর থেকে শিক্ষা নেওয়া ও কবরবাসীর জন্যে দোয়া করার জন্যে রাসূল সাঃ কবর জিয়ারতের নির্দেশ দিয়েছে।
কবর জিয়ারত করা একটি সুন্নত আমল। প্রথমে রাসূল সাঃ কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু মদীনায় আসার পরে তিনি কবর জিয়ারতের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল সাঃ নিজেও কবর জিয়ারত করতেন। তাই তার সুন্নতের অনুসরণ হিসেবে আমাদেরকেউ কবর জিয়ারত করতে হবে।
কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুসরণ করে কবর জিয়ারতের দোয়া পাঠ করে আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করতে হয়।
এই প্রতিবেদনে কবর জিয়ারতের দোয়া ও কবর জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হবে। সেই সাথে কবর জিয়ারত করা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন ও সর্বসাধারণের আলোচিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
কবর জিয়ারত কেন করব?
আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীর কবর জিয়ারত করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে আমরা কবর জিয়ারত কেন করব। কোনো স্বজনের কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্য কি হবে?
রাসূল সাঃ এর কবর জিয়ারতের নির্দেশ পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, তিনি কবর জিয়ারত করতে বলেছেন প্রথমে নিজের জন্যে পরে কবরবাসীর জন্যে।
রাসূল সাঃ বলেছেন, "তোমরা কবর জিয়ারত কর এর ফলে তোমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ হবে" সুতরাং বোঝা যাচ্ছে তিনি, প্রথমে নিজের শিক্ষা নেওয়ার জন্যে কবর জিয়ারতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর পরে কবর জিয়ারতের দোয়া পাঠ করে আত্মীয়-স্বজন সহ অনন্য কবরবাসীর জন্যে দোয়া করতে হবে। সুতরাং নিজেকে কবরের জন্যে প্রস্তুত করতে এবং কবর থেকে নিজে শিক্ষা নিয়ে কবর জিয়ারত করতে হবে। এরপরে কবরবাসীর মাগফেরাতের দোয়া করতে হবে।
কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য
অনেকেই মধ্যে কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে, কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা দেখা যায়। একটি বিষয় স্পষ্টভাবে মনে রাখবেন, কবর জিয়ারত করতে হবে নিজের শিক্ষা নেওয়া ও কবরবাসীর মাগফেরাতের দোয়া করার জন্যে।
কবরের সামনে গিয়ে কোনো কিছু চাওয়া যাবে না, বা কোনো কিছু পাওয়ার আশাও করা যাবে না। এই ধরনের কাজ শিরক এর অন্তর্ভুক্ত। যেটা সবচেয়ে বড় পাপ।
তাই কোনো আত্মীয়-স্বজন কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার পূর্বে আপনার কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্য কি সেটা ভালোভাবে স্থির করতে হবে। আর কবর জিয়ারতের মধ্যে কোনো শিরক এর স্থান নেই তাই সকল প্রকার দেওয়া-নেওয়া বা কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা করবেন না।
কবর জিয়ারতের নিয়ম
ইসলামের অন্যান্য আমলের মতোই কবর জিয়ারত কিছু নিদ্রিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে হয়। কবর জিয়ারত করার ক্ষেত্রও বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে কবর জিয়ারতের কিছু নিয়ম তুলে ধরা হল।
০১. একাকি কবর জিয়ারত করা
দলবদ্ধভাবে কবর জিয়ারত করার কোনো বিধান ইসলামে নেই। যেহেতু কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে আমরা মাগফিরাতের দোয়া করি এবং আখিরাতের শিক্ষা নেই, তাই দলবদ্ধভাবে হৈ-হুল্লোর করে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া সমীচীন নয়।
তবে যাওয়ার পথে কারো সাথে হয়ে গেলে এবং তিনিও জিয়ারতে ইচ্ছুক হলে সেক্ষেত্রে কোনো এটি একটি আলাদা বিষয়।
০২. কবরস্থানে খালি পায়ে যাওয়া
যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন খালি পেয়ে কবরস্থানে যাওয়ার। জুতা পরে কবরস্থানে যাওয়া ঠিক নয়। তাই আপনি যদি কোনো কবরের কাছাকাছি গিয়ে দোয়া করতে চান তাহলে খালি পেয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করুন।
০৩. কবরবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দেওয়া
কবরস্থানে প্রবেশের সাথে সাথে কবরবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করুন। এটি কবর জিয়ারতের অন্যতম প্রধান অংশ। কবরে সালাম দেওয়া বা কবর জিয়ারতের দোয়াটি নিচে বাংলা বানান ও উচ্চারণে শুদ্ধভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
০৪. নিজের মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা
কবর জিয়ারতের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হল নিজের মৃত্যুর করা বেশি বেশি স্মরণ করা। এই শিক্ষার কারণেই কবর জিয়ারত আমাদের দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত ভিত্তিক জীবনে সাজাতে পারব।
০৫. কবরবাসীর জন্যে দোয়া করা
"মৃত ব্যক্তির হক, জিন্দার ওপর" এমন কথা আমরা সচরাচর শুনে থাকি। কথাটি শতভাগ সত্য কথা। মৃত ব্যক্তি আমাদের দোয়ার হকদার। তাই কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আমাদেরকে তাদের জন্যে দোয়া করতে হবে, তাদের মাগফেরাতের জন্যে দোয়া করতে হবে।
তবে কবরের সামনে হাত তুলে দোয়া করবেন না। হাত তুলতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কবরের সামনে আপনি দাড়িয়ে দোয়া করতে পারেন।
এই ছিল কবর জিয়ারত করার নিয়ম। আপনি এই কবর জিয়ারতের নিয়ম অনুসরণ করে কবর জিয়ারত করতে পারেন। নিচে কবর জিয়ারতের দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
কবর জিয়ারতের দোয়া ( kobar ziarat dua )
কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম অনুসরণ করে কবর জিয়ারত করা আবশ্যক। কবর জিয়ারতের নিয়ম তো এতক্ষণ জেনে নিলেন এবার আসুন জেনে নেই কবর জিয়ারতের দোয়া।
" আস্-সালামু আ'লা আহলিদ দিয়ারী মিনাল মু'মিনিনা ওয়াল মুসলিমীন
ওয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতা'খিরীন
অ-ইন্না ইনশা-আল্লাহু বিকুম লা-হিকুন "
এই কবর জিয়ারতের দোয়া পরে কবরবাসীকে সালাম দিতে পারেন। আপনি চাইলে এখনি এই দোয়াটি কয়েকবার পরেই মুখস্ত করে নিতে পারেন।
উপরে কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এর ছবি দেওয়া হয়েছে আপনি চাইলে সেখান থেকেও এই দোয়াটি ভালোভাবে পরতে পারবেন।
কবর জিয়ারতের দোয়া ও মোনাজাত
অনেকেই কবর জিয়ারতের সময় বিভিন্ন সূরা যেমন, সূরা আল ফাতিহা, সূরা ইখলাস, সূরা নাস সহ বিভিন্ন সূরা পরে থাকি। প্রকৃতপক্ষে সব সূরা অথবা কোনো নিদ্রিষ্ট সূরা পাঠ করার কোনো উল্লেখ হাদিস গ্রন্থ নেই। ( Kobar ziarat dua )
আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছামত তাদের জন্যে মাগফেরাতের দোয়া করতে পারেন। তবে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে নিদ্রিষ্ট কোনো সূরা তিন বার পাঁচ বার পড়তে হবে এমন কোনো ধরা বাধা নিয়ম নেই।
সুতরাং, কবর জিয়ারতের মোনাজাত হিসেবে আপনি তাদের জন্যে মাগফেরাতের দোয়া করতে পারেন। তাদের কবরের আযাব মাফ ও কিয়ামতের ময়দানে সহজ হিসাবের জন্যে দোয়া করতে পারেন।
কবরে সালাম দেওয়ার নিয়ম কি?
অনেকেই জানতে চান কবরে সালাম দেওয়ার নিয়ম কি? ওযু ছাড়া কি কবরে সালাম দেওয়া যাব বা ওযু ছাড়া কি কবর জিয়ারত করা যাবে? জ্বী হ্যাঁ আপনি চাইলে ওযু ছাড়া কবরে সালাম দিতে পারবেন। এমনকি ওযু ছাড়াই কবর জিয়ারত করতে পারবেন। তবে ওযু থাকা উত্তম।
পরিশেষ বলা যায়
কবর জিয়ারত করা একটি সুন্নত কাজ। কবর জিয়ারত করলে যেমন, কবরবাসীর জন্যে মাগফেরাতের দোয়া করা হয় তেমনি রাসূল সাঃ এর একটি সুন্নত পালন করা হয়। তাই কবর জিয়ারত করা থেকে কখনো বাদ যাবেন না।
আল্লাহ আমাদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে কবর থেকে শিক্ষা নিয়ে, মৃত্যুর আগে জীবনকে পরকাল কেন্দ্রিক সাজানোর তৌফিক দান করুক।
এই আর্টিকেলটা ভালো লাগল নিচের আর্টিকেল গুলো পড়তে পারেন। কবর জিয়ারত নিয়ে জিজ্ঞাসিত কিছু জনপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর কবর জিয়ারত সম্পর্কে আপনার ধারণা আরো মজবুত করবে।